চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে ২২ কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে ওষুধ খাতের কোম্পানি বীকন ফার্মা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির লোকসান ছিল এক কোটি টাকার কিছু বেশি। এক বছরের ব্যবধানে সেই লোকসান বেড়েছে ২১ কোটি টাকা।
কোম্পানিটি আজ সোমবার তাদের তৃতীয় প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) যে আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, সেখান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে এ তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানিয়েছে কোম্পানিটি। তাতে দেখা যায়, লোকসান বাড়লেও চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বেশি আয় করেছে। বেশি আয় করেও কোম্পানিটি বড় অঙ্কের লোকসান করেছে মূলত ডলারের বাড়তি দামের কারণে কাঁচামাল আমদানির খরচ বেড়ে যাওয়ায়।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়কালে কোম্পানিটি পরিচালন মুনাফা করেছে প্রায় সাত কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি প্রায় দুই কোটি টাকা লোকসান করেছিল। সাত কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করলেও চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে কোম্পানিটির কাঁচামাল আমদানি বাবদ খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ২৫ কোটি টাকা। যেখানে গত বছরের একই সময়ে কাঁচামাল আমদানির খরচ ছিল মাত্র এক কোটি টাকা।
কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডলারের বাড়তি দামের কারণেই মূলত আমদানি খরচ আগের বছরের চেয়ে প্রায় ২৫ গুণ বেড়ে গেছে। এ কারণে পরিচালন মুনাফা করার পরও কোম্পানিটিকে গত মার্চ প্রান্তিকের শেষে লোকসান গুণতে হয়েছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে লোকসান হলেও চলতি অর্থবছরের ৯ মাস শেষে (জুলাই-মার্চ) প্রায় ৫৫ কোটি টাকা মুনাফা করেছে কোম্পানি। গত অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে মুনাফা করেছিল ৫৯ কোটি টাকা।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বীকন ফার্মা ৭৭৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৬৩৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ১ বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে ১৩৯ কোটি টাকা বা ২২ শতাংশ। আর চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ, এই তিন মাসে ব্যবসা করেছে ২৬৪ কোটি টাকা, গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২১৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের প্রথম ৩ মাসের তুলনায় চলতি বছরের প্রথম ৩ মাসে ব্যবসা বেড়েছে ৪৯ কোটি টাকার।
বীকন ফার্মা জানিয়েছে, অর্থবছরের ৯ মাস শেষে তাদের প্রতি শেয়ারে আয় বা ইপিএস কমে দাঁড়িয়েছে ২ টাকা ৩৮ পয়সায়। গত বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ২ টাকা ৫৭ পয়সা। ৯ মাসের হিসাবে কোম্পানিটি লাভে থাকলেও সবশেষ জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে লোকসানে রয়েছে। এ কারণে ইপিএসও ঋণাত্মক হয়ে গেছে। চলতি বছরের প্রথম ৩ মাস শেষে কোম্পানিটির প্রতি শেয়ারে আয় ৯৫ পয়সা ঋণাত্মক ছিল। গত বছরের একই সময়ে প্রতি শেয়ারে আয় মাত্র ৪ পয়সা ঋণাত্মক ছিল।
এদিকে অর্থবছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বড় অঙ্কের লোকসানের খবরে আজ ডিএসইতে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে। এদিন বীকন ফার্মার প্রতিটি শেয়ারের দাম ৩ শতাংশ বা প্রায় সাড়ে ৫ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে ১৭৮ টাকায়। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শেয়ারের দাম এক দিনে সর্বোচ্চ ৩ শতাংশের বেশি কমতে পারে না। শেয়ারবাজারের পতন ঠেকাতে গত ২৫ এপ্রিল পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) দরপতনের এ সীমা আরোপ করে।