শনিবার, সেপ্টেম্বর 16, 2023

কমেছে মুনাফা, বাড়ছে খেলাপি ঋণের হার

দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি ডিবিএইচ (ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং) ফাইন্যান্স পিএলসির মুনাফা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তবে কোম্পানিটির খেলাপি ঋণের হার ঋণ ও অগ্রিমের বিপরীতে ধারবাহিকভাবে বেড়ে চলেছে। কোম্পানির গত পাঁচ বছরের আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২২ হিসাববছর শেষে কোম্পানির পরিচালন মুনাফা ও ব্যবসা বাড়লেও নিট মুনাফা তিন কোটি টাকার বেশি কমেছে। এদিকে কোম্পানির ঋণ ও অগ্রিম বিতরণ বৃদ্ধির সঙ্গে খেলাপি ঋণের হার বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ সময় কোম্পানির সম্পদ বাড়লেও ব্যবস্থাপনা তহবিলের পরিমাণ কমেছে প্রায় ২৫৭ কোটি টাকা। এছাড়া ২০২২ শেষে কোম্পানিটির আমানত কমেছে প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা। সেই সঙ্গে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা তহবিলের পরিমাণ কমেছে ৩২১ কোটি টাকা এবং আমানত কমেছে ৩৯২ কোটি টাকা। অন্যদিকে চলতি ২০২৩ হিসাববছরের ছয় মাসেও কোম্পানিটির একই অবস্থা দেখা গেছে, এসময় কোম্পানির ব্যবসার সঙ্গে নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ছয় কোটি টাকা কম হয়েছে।

কোম্পানিটির আর্থিক পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৮ সালে কোম্পানির পরিচালন মুনাফা ছিল ১৫০ কোটি ১০ লাখ টাকা এবং কর-পূর্ববর্তী মুনাফা ছিল ১৬০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ সময় কোম্পানির কর পরবর্তী নিট মুনাফা হয় ১০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর পরের বছর কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা ও কর-পূর্ববর্তী মুনাফা কমলেও নিট মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৭ কোটি ৩০ লাখ টাকায়। কিন্তু পরের বছরগুলোয় কোম্পানিটির পরিচালন ও কর-পূর্ববর্তী মুনাফা কমা এবং বৃদ্ধির মধ্যে থাকলেও নিট মুনাফা ধারাবাহিকভাবে কমেছে। ২০২০ সালে কোম্পানিটির নিট মুনাফা কমে দাঁড়ায় ৮৯ কোটি ১০ লাখ টাকায়, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ কোটি ২০ লাখ টাকা কম। ২০২১ সালে আবার কোম্পানিটির নিট মুনাফা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৪ কোটি ৪০ লাখ টাকায়। কিন্তু পরের বছরে কোম্পানির নিট মুনাফা প্রায় তিন কোটি কমে ১০১ কোটি ৭০ লাখ টাকা হয়।

এদিকে কোম্পানিটির ঋণ ও অগ্রিম বিতরণের বিপরীতে খেলাপি ঋণের হার গত পাঁচ বছরে বেড়েই চলেছে। ২০১৮ সালে কোম্পানিটির ঋণ ও অগ্রিম বিতরণের বিপরীতে খেলাপি ঋণের হার ছিল শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ। এরপর ধারবাহিকভাবে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে চলেছে। ২০২২ হিসাববছর শেষে কোম্পানিটির ঋণ ও অগ্রিম বিতরণের বিপরীতে খেলাপি ঋণের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৮৬ শতাংশে। এছাড়া কোম্পানিটির গত পাঁচ বছরে সম্পদ বেড়েছে, কিন্তু ব্যবস্থাপনা তহবিলের পরিমাণ কমেছে। ২০১৮ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা তহবিলের পরিমাণ ছিল আট হাজার ৭১৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এরপর ২০১৯ ও ২০২১ সালে এর পরিমাণ কিছুটা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ২০২২ সালে এসে ব্যবস্থাপনা তহবিলের পরিমাণ পাঁচ বছরে ২৫৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা কমে দাঁড়ায় আট হাজার ৪৫৯ কোটি ৭০ লাখ টাকায়। ২০২১ সালের তুলনায় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা তহবিলের পরিমাণ কমেছে ৩২১ কোটি টাকা। ২০২১ সালে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা তহবিলের পরিমাণ ছিল আট হাজার ৭৮০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

অন্যদিকে গত পাঁচ বছরে কোম্পানিটির আমানত তহবিলের পরিমাণ খুব বেশি বাড়েনি। বরং পাঁচ বছরের মধ্যে ২০২২ সালে কোম্পানিটির আমানতের পরিমাণ কমেছে ৩২৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে কোম্পানির আমানতের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৩৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ২০২২ শেষে কোম্পানির আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় চার হাজার ছয় কোটি ১০ লাখ টাকায়। সেই সঙ্গে ২০২১ সালে কোম্পানির আমানতের পরিমাণ ছিল চার হাজার ৩৯৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। সে হিসাবে এক বছরে কোম্পানিটির আমানতের পরিমাণ কমেছে ৩৯১ কোটি ৭০ লাখ টাকা।

এদিকে চলতি ২০২৩ হিসাব বছরের ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) কোম্পানিটির সুদ থেকে নিট আয় হয়েছে ৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৯৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় কোম্পানির সুদ আয় কমেছে তিন কোটি টাকার বেশি। এ সময় কোম্পানিটির পরিচালন থেকে আয় হয়েছে ১০৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা, যা আগের বছরের একই সময় ছিল ১০৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে কোম্পানির পরিচালন আয় কমেছে এক কোটি টাকা। ছয় মাসে কোম্পানির কর-পূর্ববর্তী মুনাফা হয়েছে ৭৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৮৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে ছয় কোটি ৮২ লাখ টাকা। গত ছয় মাসে কোম্পানিটির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৪৯ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। সে হিসাবে আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির নিট মুনাফা পাঁচ কোটি ৮৮ লাখ টাকা কম হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোম্পানিটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, সাধারণভাবে যদি আর্থিক খাতের দিকে লক্ষ করা হয়, তাহলে দেখা যাবে বেশিরভাগ কোম্পানিরই ব্যবসা খারাপ যাচ্ছে। সেইসঙ্গে অন্য সব কোম্পানির খেলাপি ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিষয়টি এমন নয় যে, এ খাতের অন্য সব কোম্পানির ব্যবসা ভালো হচ্ছে, আর খেলাপি ঋণ বাড়ছে না, কিন্তু শুধু ডিবিএইচের ব্যবসা খারপা হচ্ছে আর খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালের শেষের দিকে কভিড-১৯ মহামরি শুরু হলে সব ব্যবসা খারাপ হতে থাকে। এরপর শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যার প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতির ওপর পড়ে। পরে মূল্যস্ফীতি ও পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতে থাকলে সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর এর প্রভাব পড়ে। আর সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর যে প্রভাব পড়েছে, তা সব খাতের ওপর রয়েছে। এতে সেই প্রভাব আর্থিক খাতের সব কোম্পানির ওপর পড়ায় ডিবিএইচও তার সম্মুখীন হয়েছে বলে তিনি জানান।

spot_img

অন্যান্য সংবাদ