দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ আবারও কারিগরি ত্রুটি দেখা দিয়েছে। এতে মূল পুঁজিবাজারে লেনদেনের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা না হলেও ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে ভুগতে হয়েছে। দিন শেষে তারা ডিএসইর কাছ থেকে লেনদেনের প্রতিবেদন পায়নি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সমস্যার সমাধান হয়নি বলে বিভিন্ন ব্রোকারেজ সূত্রে জানা গেছে।
নিয়মানুযায়ী, শেয়ারবাজারের প্রতিদিন লেনদেন শেষে লেনদেন নিষ্পত্তির বা বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচা সংক্রান্ত তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্রোকারেজ হাউসগুলোতে সরবরাহ করে ডিএসই। সে অনুযায়ী শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) মাধ্যমে লেনদেন নিষ্পন্ন করে ব্রোকারেজ হাউসগুলো। কিন্তু গতকাল লেনদেন শেষে হলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে সেটি সম্ভব হয়নি।
তথ্যানুসারে, আজ ডিএসইর ফ্লেক্সটিপির চারটি সাইলোয় সমস্যা দেখা দেয়। এতে এ সাইলোগুলোর অধীনে থাকা ৬৪টি ব্রোকারেজ হাউজ দিন শেষে ডিএসইর কাছ থেকে ত্রুটিযুক্ত লেনদেন প্রতিবেদন পায়। এতে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো সারা দিনে যে পরিমাণ লেনদেন করেছে আর ডিএসইর পক্ষ থেকে যে সমস্যাগ্রস্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে সেটির তথ্যে গরমিল রয়েছে।
সমস্যা ধরা পড়ার পর ডিএসইর কারিগরি দলের পক্ষ থেকে এটি সারিয়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য বিদেশী ভেন্ডর ফ্লেক্সট্রেডের সঙ্গে মিলে কাজ শুরু করে এক্সচেঞ্জটি। ভেন্ডর প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে সমস্যা সমাধানের বার্তা দেয়া হলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউজ দিনের লেনদেন প্রতিবেদন বুঝে পায়নি বলে জানিয়েছে। আগামিকাল সকালের মধ্যে এ সমস্যা সমাধান না হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো লেনদেনে অংশ নিতে পারবে না বলে জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, আজ রোববার লেনদেন হওয়া শেয়ার দিনশেষে নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণে প্রায় দুইশ’র বেশি কর্মকর্তা রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে অপেক্ষা করছেন বলে জানা গেছে। এ সমস্যার কারণে ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তারা বাসায় যেতে পারেননি। ক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি তারা প্রশ্ন তুলছেন ডিএসইর আইটি বিভাগের কর্মকর্তাদের বিচক্ষণতা নিয়েও।
এ বিষয়ে জানতে ডিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদারকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পরে নাম না প্রকাশের শর্তে ডিএসইর একজন কর্মকর্তা জানান, রোববার লেনদেন শেষে অনেক প্রতিষ্ঠানের সেটেলমেন্ট সম্পন্ন করতে সমস্যা হয়েছে। পরে বিষয়টি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে অভিযোগ জানালে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সমস্যা সমাধান করা হয়। যেগুলো বাকি আছে সেগুলোর বিষয়ে কাজ চলছে। আশা করছি খুব শিগগির সমাধান হয়ে যাবে।
এদিকে, এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে হাসান সিকিউরিটি হাউজের কর্মকর্তা সানি জানান, ডিএসইর ভুল ফাইল পাঠানোয় আজকে অনেক ব্রোকারহাউজ এখনো ফাইল আপলোড করতে পারেনি, পে-ইন পে-আউট করতে পারেনি। এ বিষয়ে কোনো তথ্যও জানানো হচ্ছে না ডিএসইর পক্ষ থেকে।
আরেকটি হাউজের কর্মকর্তা বেলাল হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে ডিএসইকে জানালে তারা ২০ মিনিটের মধ্যে সমাধান করছে বলে জানায়। এখন রাত নয়টা বাজে, তবুও তাদের ২০ মিনিট আর শেষ হচ্ছে না। এখনো সব প্রতিষ্ঠানের সেটেলমেন্ট সমস্যা ঠিক করতে পারেনি।
তিনি যোগ করে বলেন, ভোগান্তির স্বীকার হওয়া হাউজগুলোতে প্রতিষ্ঠানের অনেককেই এ রাতে অফিস করতে হচ্ছে। এখনও দুইশ’র বেশি কর্মকর্তা অপেক্ষা করছেন। যদি আজকের মধ্যে সম্ভব না হয়, সবাইকে বাসায় যেতে বলা হচ্ছে না কেন। ডিএসই আইটি এখন ফোনও উঠায় না। আমরা কি করব।