শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাধারণ বীমা খাতের অধিকাংশ কোম্পানির মুনাফা আগের তুলনায় কমেছে। সব কোম্পানি মুনাফায় থাকলেও ২৪টির শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএস কমেছে। ইপিএস বেড়েছে ১৭টির। একটির অপরিবর্তিত। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত এ খাতের ৪২ কোম্পানির সবকটি অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৪২টি সাধারণ বীমা কোম্পানির কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে ৩১০ কোটি টাকা, যা গত বছর ছিল ৩৩১ কোটি টাকা। নিট মুনাফা প্রায় ২১ কোটি টাকা বা ৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ কমেছে। ১২ কোম্পানির ইপিএস গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ থেকে ৪৬ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বিপরীতে ২০ শতাংশের বেশি মুনাফা হয়েছে ছয় কোম্পানির। মুনাফা কমার শীর্ষে রয়েছে প্রভাতী, ইসলামিক কমার্শিয়াল, সোনার বাংলা, গ্লোবাল, সেনা কল্যাণ, প্রাইম, ফিনিক্স, ইস্টার্ন, প্যারামাউন্ট, গ্রিন ডেল্টা, পূবরী এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স। প্রবৃদ্ধিতে শীর্ষে মেঘনা, ইউনিয়ন, ক্রিস্টাল, সিটি জেনারেল, জনতা এবং অগ্রণী।
মুনাফা কমার জন্য পুনর্বীমা খাতে খরচ বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে প্রাইম ইন্স্যুরেন্স। ফিনিক্স জানিয়েছে, প্রিমিয়াম আয় এবং বিবিধ আয় কমার কারণে মুনাফা কমেছে। গ্রিন ডেল্টা উল্লেখ করেছে, বীমা দাবি পরিশোধ বেড়ে যাওয়ায় মুনাফা কমেছে। বীমা দাবি পরিশোধ বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও পুনর্বীমা খাতে খরচ বৃদ্ধিকে মুনাফা কমার কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স। ব্যাখ্যা প্রদান বাধ্যতামূলক হলেও অন্য কোম্পানিগুলো প্রতিবেদনে তা দেয়নি।
অর্ধবার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেঘনা ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস ৯৮ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২৬ পয়সা। এর নিট মুনাফা ৭০ লাখ থেকে বেড়ে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। মুনাফায় প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৭৭ শতাংশ।
৬৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে পরের অবস্থানে ছিল ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স। কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় ১ টাকা ১ পয়সা থেকে বেড়ে ১ টাকা ৭০ পয়সা হয়েছে। ক্রিস্টাল ইন্স্যুরেন্সের ইপিএস ৩৭ শতাংশ বেড়ে ১ টাকা ৭৮ পয়সা হয়েছে। মুনাফা ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে সিটি জেনারেল, জনতা ও অগ্রণী ইন্স্যুরেন্সের। ১১ শতাংশ বেড়েছে ঢাকা ইন্স্যুরেন্সের।
প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স গত বছরের প্রথম ছয় মাসে নিট দুই কোটি ১৮ লাখ টাকা মুনাফা করে। এ বছর ১ কোটি ২৯ লাখ টাকায় নেমেছে। এ কারণে ইপিএস ১ টাকা ৯৩ পয়সা থেকে কমে নেমেছে ১ টাকা ৪ পয়সায়। মুনাফা কমার কারণ ব্যাখ্যা না করলেও বীমা কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন ঘেঁটে দেখা গেছে, তাদের নিট প্রিমিয়াম আয় পাঁচ কোটি টাকা কমেছে। বিপরীতে বিনিয়োগ ও অন্যান্য আয় বেড়েছে ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। তবে বিনিয়োগ ও অন্যান্য খাতের আয় গত বছরের ৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকা থেকে কমে ১ কোটি ৮৭ লাখ টাকায় নামায় মুনাফায় বড় পতন হয়েছে। ইসলামিক কমার্শিয়াল ইন্স্যুরেন্সের নিট মুনাফা ৪ কোটি ৪১ লাখ টাকা হয়েছে, যা গত বছরের প্রথম ছয় মাসে ছিল ৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। নিট মুনাফা ২৭ লাখ টাকা বেড়েছে। তার পরও ইপিএস কমার কারণে গত বছরের ডিসেম্বরে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগের তুলনায় আইপিওতে এর শেয়ার বেড়েছে। সেনা কল্যাণ ইন্স্যুরেন্সের মুনাফা কমার কারণ বিবিধ বীমা খাত থেকে আয় না হয়ে উল্টো দুই কোটি টাকারও বেশি ঘাটতি তৈরি হয়েছে। গত বছর যেখানে এ খাতে আয় হয়েছিল পৌনে ৪২ লাখ টাকা, সেখানে এ বছর দুই কোটি তিন লাখ টাকা বাড়তি খরচ হয়েছে।