বাংলাদেশে ব্যবসা করলেও ঠিকমতো সরকারের রাজস্ব পরিশোধ করছে না বহুজাতিক কোম্পানি সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৭ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে ৩৪ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন ভ্যাটের নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের এক প্রতিবেদনে বড় অঙ্কের এই ফাঁকির চিত্র উঠে এসেছে। শুধু রাজস্ব ফাঁকি নয়, অবৈধভাবে রেয়াতি সুবিধাও নিয়েছে সিঙ্গার বাংলাদেশ। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দেশে ব্যবসারত প্রতিষ্ঠানগুলোর ঠিকমতো ভ্যাট পরিশোধ করছে কি না বা কোনো ধরনের ভ্যাট ফাঁকি হচ্ছে কি না—বিষয়গুলো মনিটরিং করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক প্রতিবেদন থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র নিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদ্ঘাটন করে। আর এনবিআরের এই প্রতিষ্ঠানের এক সমন্বিত নিরীক্ষায় সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের ৩৪ কোটি টাকা ফাঁকির চিত্র উঠে এসেছে।
২০১৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সময়ে এই ফাঁকি দেয় সিঙ্গার বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির তিনটি ভ্যাট নিবন্ধন নম্বর রয়েছে। আর এই তিন নিবন্ধনের বিপরীতে সরকারের এই রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
প্রথম ধাপে কাস্টম এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা দক্ষিণের অধীনে করা হয়। এই প্রতিবেদনে সিঙ্গার বাংলাদেশ ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে ১৪ কোটি ২৬ লাখ ২৮ হাজার টাকার ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়। পরে ভ্যাট আইনের ৫৫ ধারায় কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়। একই সঙ্গে ভ্যাট আইন অমান্য করে ২ লাখ ২১ হাজার ১০৮ টাকার অবৈধ রেয়াত নিয়েছে সিঙ্গার বাংলাদেশ।
পরে আরেকটি নিরীক্ষা করা হলে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে উৎসে মূসক ও অবৈধ রেয়াত নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। এই নিরীক্ষায় আরও ২০ কোটি ৩১ লাখ ৫২ হাজার টাকার ভ্যাট না দেওয়ারও চিত্র উঠে আসে এই প্রতিবেদনে।
সবশেষ ভ্যাট গোয়েন্দার সমন্বিত নিরীক্ষা মোট ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ১ হাজার ৮০৩ টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ) ভ্যাট।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেডের কোম্পানি সচিব আশিকুর রহমান বলেন, এনবিআর আমাদের কাছে টাকা পাবে, এটি সত্য। আমরাও এনবিআরের কাছে অর্থ পাব। পরে এনবিআর সমন্বয় করবে। তবে এটি ভ্যাট ফাঁকি নয়, এটা একটি নিয়মিত প্রক্রিয়া বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
সূত্র আরও জানায়, সিঙ্গার বাংলাদেশ থেকে ভ্যাটের টাকা আদায়ে দীর্ঘদিন থেকে চিঠি চালাচালি চলছে। সর্বশেষ তিনটি নিবন্ধন না থেকে বর্তমানে কোম্পানিটি এনবিআরের এলটিইউ ভ্যাটের আওতায় রয়েছে। অর্থাৎ এখন এলটিউ অফিসের মাধ্যমে রাজস্ব পরিশোধ করছে। আর কোম্পানি থেকে অর্থ আদায়ে আইনানুগ ব্যবস্থাও নিয়েছে এলটিইউ কর্তৃপক্ষ। প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক কার্যক্রম তদারকি করতে বা ভ্যাট আদায় সংক্রান্ত সবকিছু এলটিইউ থেকে করার জন্য এরই মধ্যে এনবিআরের সদস্য বরাবর একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে এলটিইউ থেকে।
সিঙ্গার বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এ ক্যাটাগরিতে থাকা কোম্পানির উদ্যোক্তাদের কাছে রয়েছে ৫৭ শতাংশ শেয়ার।