শুক্রবার, সেপ্টেম্বর 15, 2023

বিএসইসির নজরদারীতে জুট স্পিনার্স

জুট স্পিনার্স লিমিটেডের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণ বের করতে চায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সাথে কোম্পানির সর্বশেষ কার্যক্রমের অবস্থাও পর্যালোচনা করবে।

সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটী গঠন করেছে কমিশন। কমিটি বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট, শিরোমনি, খুলনায় অবস্থিত কারখানাটিও পরিদর্শন করবে।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন বিএসইসির পরিচালক মোঃ আবুল কালাম, সহকারী পরিচালক রেজাউন নুর মেহেদী ও মোঃ আব্দুল বাতেন।

চলতি বছরের ১৮ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিল ২১৪ টাকা ৪০ পয়সা। কিন্তু এরপর ২৫ মে এর শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ৪৪৫ টাকা ৯০ পয়সায় দাঁড়ায়। এক মাসের মধ্যে কোনো কারণ ছাড়াই এর শেয়ারের দাম প্রায় ১০৮% বেড়েছে। তবে গত রোববার কোম্পানিটির দাম কমে সর্বশেষ দাঁড়ায় ৪১৭ টাকা ১০ পয়সায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির একজন কর্মকর্তা জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটি ঘোষণা করেছে যে মেশিনের টুকরো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ সফলভাবে সম্পন্ন করার পর প্রতিষ্ঠানটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে। ঘোষণার পর ১১ মাসের মধ্যে, সংস্থাটি এখনও বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করতে পারেনি। অথচ এরপর কোনো মূল্য-সংবেদনশীল তথ্য ছাড়াই কোম্পানিটির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

তিনি বলেন, উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণ কমিশন চিহ্নিত করবে। এই কোম্পানির শেয়ারে কোনো কারসাজি হয়েছে কি না তাই খুজে বের করবে কমিশন।

তিনি এর সাথে যোগ করে বলেন, তদন্ত দলটি কোম্পানির প্রকৃত চিত্র দেখতে কারখানাটি পরিদর্শন করবে। এসময় তারা কারখানার উৎপাদন এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবেন।

অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোম্পানিটির উর্ধতন একজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রায় প্রস্তুত হলেও দক্ষ জনবলের অভাবে থমকে রয়েছে এর সকল কার্যক্রম। তারা আশা করেছিল যে কয়েক মাসের মধ্যে এটি সমাধান হবে।

তিনি যোগ করে আরও বলেন, কমিশন গত মাসে কোম্পানির কারখানা পরিদর্শন করতে চাইলেও বিষয়টি আর হয়ে ওঠে নি। তবে সম্ভবত, তারা এ মাসে কারখানার সার্বিক অবস্থা দেখতে য়াসতে পারেন।

তিনি বলেন, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আসলেই জানে না কেন শেয়ারের দাম বাড়ছে। জুট স্পিনার্স একটি স্বল্প মূলধনী কোম্পানি, এর শেয়ার সংখ্যাও কম। স্টক এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি চাইলেও যে কোন সময় খুজে বের করতে পারে কারা এই কারসাজির সাথে জড়িত।

এই কর্মকর্তা বলেন, এটা তো অবশ্যই সত্য যে কোম্পানিটি ব্যবসায় ফিরে আসতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। মালিকপক্ষ ছোট পরিসরে হলেও এর উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করতে চাচ্ছেন।

প্রতিষ্ঠানটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করতে পারলে ব্যপক রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

ঋণের দায়ে জর্জরিত এই পাটকলটি আর্থিক সমস্যায় পড়ে ২০১৬ সালে উৎপাদন বন্ধ করতে বাধ্য হয়। এরপর গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশের প্রথম বেসরকারী পাটকল হিসাবে পরিচিত কোম্পানীটি ট্রায়াল উৎপাদন শুরু করে। এ সময় কোম্পানিটি তার ৩টি গোডাউনের মধ্যে ২টি কাঁচা পাটের গোডাউনের সংস্কারের পাশাপাশি নতুন যন্ত্রপাতিও কেনে। এরপরও কোম্পানিটি এখন পর্যন্ত বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারেনি।

বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় তুরস্ক, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মত লাভজনক বাজারে নিজের অবস্থান হারিয়েছে কোম্পানিটি। এই বাজার আবার উদ্ধার করা কোম্পানিটির জন্য কঠিন হবে বলে মনে করেন তারা।

উল্লেখ্য, সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, শেষ প্রান্তিক (জানু-মার্চ ২৩) পর্যন্ত কোম্পানির নিট লোকসান দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা গত অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ সময়ের মধ্যে ছিল ৬ কোটি টাকা।

জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে, এর শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ১০ টাকা ৮৩ পয়সা এবং এর শেয়ার প্রতি নিট দায় মূল্য ছিল ৪৭৩ টাকা ৪৫ পয়সা।

নিরীক্ষকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালের জুন মাসে কোম্পানির দায় ছিল ৭৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা যা এর মোট সম্পদের চাইতে ৪৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা বেশি।

কোম্পানি জনতা ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা ঋণ পুনঃতফসিল করেছে, পরিশোধের সময়সীমা দশ বছর বাড়িয়েছে। অবশ্য এ সময় কোম্পানিটি অন্যান্য ঋণের ২ থেকে ৩ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানির কর্মকর্তারা ।

এর পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ৩১ মে ২০২৩ পর্যন্ত, উদ্যোক্তা পরিচালকরা যৌথভাবে ৩৯.৮২% শেয়ার, প্রতিষ্ঠান ২৩.২০% এবং সাধারণের কাছে কোম্পানির ৩৬.৯৮% শেয়ার ছিল।

spot_img

অন্যান্য সংবাদ