পুঁজিবাজার ডেস্কঃ বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা একাধিক উদ্যোগের পরও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ নিয়ে ব্যাংকগুলোর আগ্রহ কম। আইনি সীমায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশ বিনিয়োগ করতে পারে। তবে ৪২টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের গড় বিনিয়োগ রয়েছে ১৮ শতাংশেরও কম। গত ১০ মার্চ পর্যন্ত পুঁজিবাজারে এককভাবে ৪২টি ব্যাংকের বিনিয়োগ ছিল ১৪ হাজার ১৯ কোটি টাকা। সাবসিডিয়ারিসহ ৪২ ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এসইসি পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠালে মোট ৪৭টি ব্যাংক তাতে সাড়া দিয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে পুঁজিবাজারে।
দেশে বর্তমানে ৬১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের কার্যক্রম থাকলেও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ রয়েছে এমন ব্যাংক আছে ৪৯টি। বিদেশি মালিকানাধীন ৯টি ও বিশেষায়িত ৩ ব্যাংকের কোনো বিনিয়োগ নেই পুঁজিবাজারে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে চারটির বিনিয়োগ রয়েছে হাজার কোটি টাকার ওপরে, যেগুলো রেগুলেটরি মূলধনের প্রায় ২৩ শতাংশ বিনিয়োগ করেছে। এর বাইরে সাতটি ব্যাংকের বিনিয়োগ রয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। অবশিষ্ট ৩৮ ব্যাংকের বিনিয়োগ আইনি সীমার অনেক নিচে রয়েছে।
গত নভেম্বর পর্যন্ত পুঁজিবাজারে ৪৮ ব্যাংকের এককভাবে বিনিয়োগ ছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা। এটি সে সময়ের রেগুলেটরি মূলধনের ১৫ শতাংশ। সাবসিডিয়ারিসহ ওই সময়ে ৪৮ ব্যাংকের বিনিয়োগ ছিল প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত সাবসিডিয়ারিসহ ৪২ ব্যাংকের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা, যা ৩১ জানুয়ারি ছিল ২৩ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারির তুলনায় মার্চে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ কিছুটা কমেছে। গত ৩১ জানুয়ারি পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর একক বিনিয়োগ ছিল ১৫ হাজার ৯২ কোটি টাকা, যা ১০ মার্চে ১৪ হাজার ১৯ কোটি টাকায় নেমে যায়। এ হিসাবে উল্লিখিত সময়ে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ কমেছে ১ হাজার ৭৩ কোটি টাকা। মার্চের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতেও বিনিয়োগ বেশি ছিল। পুঁজিবাজারে এসব ব্যাংকের আরও ৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।
গত ১০ মার্চ পুঁজিবাজারে ৪২ ব্যাংকের এককভাবে যে বিনিয়োগ রয়েছে, তারমধ্যে প্রকৃত বিনিয়োগের পরিমাণ হচ্ছে ৭ হাজার ৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে বিনিয়োগের ৪ হাজার ৯৬৬ কোটি টাকা সাবসিডিয়ারিকে ঋণ হিসেবে দেওয়া আছে। এ ছাড়া পার্পেচুয়াল বন্ডে ৯৪০ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে ৪২ ব্যাংকের।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত ৪ নভেম্বর পর্যন্ত ৪৮ ব্যাংকের সাবসিডিয়ারিগুলোর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি বছরের ১০ মার্চ পর্যন্ত ৪২ ব্যাংকের সাবসিডিয়ারির পুঁজিবাজারে মোট বিনিয়োগ ছিল ৮ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। অবশ্য সাবসিডিয়ারিগুলো পুঁজিবাজারে যে বিনিয়োগ দেখায়, তার উল্লেখযোগ্য অংশই গ্রাহককে দেওয়া মার্জিন ঋণ।
আইন অনুযায়ী, বর্তমানে ব্যাংকগুলো এককভাবে রেগুলেটরি মূলধনের ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে, যা সাবসিডিয়ারিসহ ৫০ শতাংশ। এসইসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে পুঁজিবাজারে হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে মাত্র চারটি ব্যাংকের। এগুলো হলো আল আরাফা ইসলামী, ব্র্যাক, সিটি ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। এর বাইরে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংক এনআরবিসিও রেগুলেটরি মূলধনের যে আইনি সীমা তার প্রায় পুরোটা বিনিয়োগ করেছে। গত এক বছরেরও বেশি সময় পুঁজিবাজারের বিনিয়োগ থেকে ব্যাংকগুলো ভালো মুনাফা পেয়েছে, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিট মুনাফা বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। চলতি বছর অধিকাংশ ব্যাংকের সুদ আয় কমলেও বিনিয়োগ থেকে ভালো মুনাফা পেয়েছে বলে বিভিন্ন প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ভালো মুনাফার সুযোগ থাকার পরও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগে এগিয়ে না আসার একটি বড় কারণ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা। পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ গণনা করা হয় বাজার মূল্যের ভিত্তিতে। পুঁজিবাজারে ঊর্ধ্বগতি তৈরি হলে গণনা পদ্ধতির কারণে ব্যাংকের বিনিয়োগ বেড়ে যায়। এর আগে পুঁজিবাজারের বড় উল্লম্ফনের কারণে একটি ব্যাংকের বিনিয়োগ আইনি সীমা অতিক্রম করায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জরিমানার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বিনিয়োগ আইনি সীমার নিরাপদ দূরত্বে রাখার এটি বড় কারণ বলে ব্যাংকাররা জানিয়েছেন।
এর বাইরে পুঁজিবাজারের জন্য গঠিত বিশেষ তহবিল থেকেও ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছে। গত ১২ মে পর্যন্ত পুঁজিবাজারের জন্য ৩৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকার তহবিল গঠন করেছে, যার মধ্যে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অবশ্য বিশেষ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলোর এ বিনিয়োগের মধ্যে বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগও রয়েছে।