পুঁজিবাজার রিপোর্টঃ পতনের বৃত্ত থেকে বেরই হতে পারছে না দেশের পুঁজিবাজার। ক্রমাগত বাজার ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। নিয়মিত শেয়ার লেনদেনে বিমুখ হচ্ছেন ব্যক্তি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। এদিকে থেমে থেমে দরপতনে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও স্টেকহোল্ডাররা একের পর এক আশার বাণী শোনালেও তার কোনো প্রভাব নেই শেয়ারদরে। যেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা রোজার মাসে বাজার ভালো হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিলো সেখানে মাসের প্রায় প্রতিদিনই হতাশার চিত্র দেখতে হচ্ছে বিনিয়োগকারিদের। বাজার সংশ্লিষ্টদের দেয়া আশায় ভরসা করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা এখন অনেকেই নিজেদের প্রতারিত মনে করছেন। তাদের মতে বাজার এখন অভিভাবকহীনের মত আচরণ করছে। তাদের কান্না দেখার যেন কেউ নেই। নানা পদক্ষেপের পরও প্রায় প্রতিদিনই সূচকের পতন, লেনদেন তলানিতে নেমে আসায় বিনিয়োগকারীদের হতাশা এখন ক্ষোভে পরিণত হয়েছে।
সাধারণ বিনিয়োগকারিদের কথার সাথে একই সুরে কথা বলেছেন দেশের পুঁজিবাজার বিশ্লেকরাও। তাদের মতে, বাজারে তারল্য বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির পক্ষ থেকে একের পর এক উদ্যোগ নেয়া হলেও প্রতিটি উদ্যোগই বাস্তবায়নের অভাবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে।
সর্বশেষ ঘোষণা ছিল, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো রোজায় ৩০০ কোটি টাকা আর ২৫০ স্টক ডিলার এক কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করবে। কিন্তু এসব ঘোষণা ও নির্দেশের কোন বাস্তবায়ন নেই। আবার পতন ঠেকাতে বেঁধে দেয়া হয়েছিলো ২ শতাংশের সার্কিট ব্রেকার। কিন্তু তারও কোনো প্রভাব দেখছে না কেউ। প্রতিদিনই বিপুলসংখ্যক শেয়ারের দর কমছে। এক দিনে দরপতনের সর্বোচ্চ সীমা ২ শতাংশ পর্যন্ত থাকলেও কোনো ক্রেতা দেখা যাচ্ছে না বহু কোম্পানির।
বাজার ক্রমেই পতনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন মার্জিন ঋণ গ্রহণকারীরা। ঋণ সমন্বয় করতে তারা বাধ্য হয়ে অনেক কম দরে শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এতে তাদের লোকসানের পাল্লা আরও বেশি ভারী হচ্ছে। এই প্রভাবে সূচক আরও কমছে।
এরই প্রতিফলন দেখা গিয়েছে আজকের বাজারেও। টানা চার কার্যদিবস পতনের পর গতকাল সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে একটু দম নিতে থেমেছিল সূচক। আজ আবার সেই একঅই চিত্র। আজ সোমবার (১১ এপ্রিল) আবার পতন হয়েছে পুঁজিবাজারে। এদিন পুঁজিবাজারের সব সূচক কমেছে। একই সঙ্গে লেনদেনের পরিমাণে এবং অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ারের দরও কমেছে।
সোমবার (১১ এপ্রিল) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসইর) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৩ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৬৩৮ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অন্য সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসইএস শরীয়াহ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৫৪ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৪৫১ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
ডিএসইতে লেনদেনে হয়েছে ৩৮১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৯১টির, কমেছে ২৩৪টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের। ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫৫৭ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৬৪৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।
এদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) প্রধান সূচক সিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ২৪ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৭০১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। এছাড়া সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৪০ পয়েন্ট কমে ১৯ হাজার ৫০৪ পয়েন্টে, সিএসই৫০ সূচক ২ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৪৮ পয়েন্টে এবং সিএসই৩০ সূচক ৬ পয়েন্ট কমে ১৪ হাজার ১২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সিএসইতে মোট ২৭৯টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৮৩টির, কমেছে ১৬৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩ টির শেয়ার ও ইউনিটের। সিএসইতে ২৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে।