পুঁজিবাজার রিপোর্টঃ পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়ার পরের দিনই লেনদেনে গতি ফিরলো বাজারে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দামামায় বাজারে পতন শুরু হওয়ার পরে আজকেই প্রথম এতখানি লেনদেন দেখল বাজার। দিন শেষে আজ লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১৬ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, যা গত ২০ ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ।
গতকাল মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব পোর্টফোলিওর মাধ্যমে সামনের মাসে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা জানায়। এর পাশাপাশি ডিবিএ প্রেসিডেন্ট স্টক ব্রোকার ও ট্রেকহোল্ডারদের ডিলার অ্যাকাউন্টে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। তারা প্রতিটি ডিলার অ্যাকাউন্টে রমজান মাসে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করবেন। এতে পুঁজিবাজারে নতুন ২৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের আশা করা যাচ্ছে। এছাড়া স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড থেকে ১০০ কোটি টাকা আইসিবির মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাজারে নতুন করে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মত নতুন বিনিয়োগ আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আর এতে আশার সঞ্চার হচ্ছে সাধারণ বিনিয়োগকারিদের মধ্যে। গত মাস থেকে লেনদেনের যে খরা চলছে তা সহসাই কেটে যাবে বলে আশা বাজার-সংশ্লিষ্টদের। তারা বলছেন, গতকাল নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে বৈঠকে বাজার মধ্যস্থতাকারিরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তা যদি সত্যিই তারা বাস্তবায়ন করতে পারে তবে হারানো আস্থা অনেকটাই ফেরত আসবে বিনিয়োগকারিদের মধ্যে। এতে প্রাতিষ্টানিকদের পাশাপাশি অন্য যারা বিনিয়োগ না করে পর্যবেক্ষণে ছিলেন তারাও বাজারে ফেরত আসবেন। তাদের সম্মিলিত চেষ্টাতেই বাজার আবার ঘুরে দাড়াবে।
বিশ্লেষকদের ধারণা বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস পাওয়া গেছে আজকেই। পতন থেকে বেরিয়ে সূচকের যেমন ঊর্ধ্বমুখীতার দেখা মিলছে, তেমনি বেড়েছে লেনদেনের গতি। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে সবকটি মূল্যসূচক। তবে যে কয়টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে, কমেছে তার থেকে বেশি।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দরপতনের মধ্যে সূচক ঊর্ধ্বমুখী রাখতে বড় ভূমিকা পালন করেছে অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা লিজিং কোম্পানি এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যান্য খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম কমলেও, এই দুই খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বেড়েছে। এতেই সূচক ঊর্ধ্বমুখী থেকে শেষ হয়েছে লেনদেন।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে লেনদেনের শুরুতেই ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে আধাঘণ্টার মধ্যেই এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ঘাটতি দেখা যায়। এরপর সূচকের বেশ অস্থিরতা দেখা যায়। এরপর আর সূচক ওই পর্যায়ে পৌছাতে পারেনি। টানা নিচের দিকে নামতে থাকে সূচক। এতে এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২৩ পয়েন্ট কমে যায়।
এ পরিস্থিতিতে আবার পতনের আশঙ্কা পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। তবে লেনদেনের শেষ ৮ মিনিটে বড় ধরনের চমক দেখা যায়। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম এই সময়ে যায় বেড়ে। এমনকি দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমাও স্পর্শ করে একাধিক কোম্পানি। এতেই সবকটি মূল্যসূচক বেড়ে দিনের লেনদেন শেষ হয়।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৮৩টির। আর ৬২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। অপরদিকে আর্থিক খাতের ১১টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ৪টির এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের ২০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে দাম কমেছে ১০টির।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ৭৫৭ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৮ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৪৭৪ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৬৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১৪ কোটি ৯৫ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৮০১ কোটি ৩২ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন বেড়েছে ৩১৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। লেনদেন শুধু আগের কার্যদিবসের তুলনায় বাড়েনি, গত ১৬ ফেব্রুয়ারির পর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ২১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর গত দেড় মাসে ডিএসইতে আর ১২’শ কোটি টাকার লেনদেনের দেখা মেলেনি।
লেনদেন বাড়ার দিনে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ফরচুন সুজের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৩৮ কোটি ৬০ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালী পেপারের ১০২ কোটি ৭৩ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬৯ কোটি ২৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে জিনেক্স ইনফোসিস।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- বেক্সিমকো, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, ফু-ওয়াং ফুড, ইয়াকিন পলিমার, বিকন ফার্মা, কাট্টালী টেক্সটাইল এবং বিডিকম অনলাইন।
অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৬১ কোটি ৫২ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩০৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৯টির এবং ৪২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।