পুঁজিবাজার রিপোর্টঃ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকের পর এবার বিমা কোম্পানিকে তাগাদা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়াতে ৩০ সাধারণ বিমা কোম্পানির উদ্যোক্তাদের কমপক্ষে ৬০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আর তাতেই আজ হুহু করে বেড়েছে সাধারণ বিমা খাত। পতনের বাজারে যেখানে অধিকাংশ খাতের বেশির ভাগ শেয়ারের দাম কমেছে সেখানে সাধারণ বিমা খাতে কমেনি একটি শেয়ারের দামও। শুধু তাই নয় আজ পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেয়ারগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ দর বাড়ার তালিকায় থাকা ৩৫ শেয়ারের মধ্যে ৩০টিই বিমা খাতের। এমনকি আজ সর্বোচ্চ লেনদেনের কৃতিত্বও এই খাতের। বাজারের মোট লেনদেনের প্রায় ১৭ শতাংশই এসেছে এই খাত থেকে।
তবে বিমা খাতের এই জয়জয়কারও অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে বাজারের অন্য সব শেয়ারের দরপতনে। আজ অন্য খাতগুলোর বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমেছে। কমেছে বাজারের সূচকও। আজ ২২টি কোম্পানির লেনদেন শেষ হয় ক্রেতাশুন্য অবস্থায়। বিশ্লেষকদের ধারণা, ২ শতাংশ সার্কিট ব্রেকারের বাধা না থাকলে বাজারে আরও বড় পতন হতে পারত।
বাজারের এমন টালমাটাল অবস্থায় সবাই তাকিয়ে আছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে অন্য সব অংশীদারদের সাথে আজকের বৈঠকের দিকে।
বিকেল সাড়ে ৪টায় বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে এই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে। মার্কেট মেকার হিসেবে পরিচিত সবগুলো পক্ষই আজ উপস্থিত থাকবেন এই বৈঠকে। বৈঠক ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ), বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ), অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অ্যাসোসিয়েশন, ক্যাপিটাল মার্কেট স্টাবিলাইজেশন ফান্ডসহ অন্যান্য স্টেকহোল্ডাররা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
বিএসইসির সূত্রে জানা যায়, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ, ডিলারদের মাধ্যমে বিনিয়োগ, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা করা হবে। স্টেকহোল্ডারদের সুবিধার্থে কীভাবে পলিসি সাপোর্ট দেওয়া যায় সেই বিষয়েও বৈঠকে আলোচনা করা হবে আজ। তার পাশাপাশি ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড থেকে কীভাবে বিনিয়োগ করলে বাজারে তারল্য বাড়বে সেই বিষয়ে আলোচনা করা হতে পারে আজ। তাছাড়াও বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য মার্চেন্ট ব্যাংক ১০ হাজার কোটি টাকা তহবিলের প্রস্তাব দিয়েছে। তারা এই অর্থ কীভাবে চায়, তা দিয়ে কী ধরনের সাপোর্ট তারা পুঁজিবাজারে দেবে— এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হবে।
এ আলোচনা ফলপ্রুস হলে বাজারের তারল্যের ঘাটতি অনেকাংশেই মোকাবেলা করা যাবে বলে ধারণা বাজার বিশ্লেষকদের। তবে আলোচনা কতটুকু ফলপ্রুস হবে সে বিষয়ে সন্দিহান বাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা ধারণা করছেন, ভালো কিছু হলে বাজারে তার আজ প্রতিফলন দেখা যেত।
বৈঠক পুর্ববর্তী বিমার এই উত্থানের দিন পুঁজিবাজার পার করল হতাশার আরও একটি দিন। এক দিনে দর হারিয়েছে দুইশরও বেশি কোম্পানি। বিমা খাতে লেনদেন বাড়লেও পুরো বাজারের লেনদেন কমেছে। আগের দিন প্রায় হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি লেনদেন হলেও সেটি কমে আজ হয়েছে আটশ কোটি টাকার কিছু বেশি।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লেনদেনের প্রথম আধা ঘণ্টা অব্যাহত থাকে। এতে লেনদেনের এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ১৯ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
কিন্তু দুপুর সাড়ে ১০ টার পর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের দরপতন হয়। এতে দেখতে দেখতে সূচক ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। বাজারের এ পরিস্থিতিতে দাম বাড়ার ধারা ধরে রাখে বিমা ও আর্থিক খাতের বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। তবে এ ধারা পতনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি সূচককে। ধীরে ধীরে দাম কমতে থাকে বেশিরভাগ শেয়ারের।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১০৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২০৫টির। আর ৬৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় সাড়ে ১১ পয়েন্ট কমে ছয় হাজার ৭৫৩ পয়েন্টে নেমে আসে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক পাঁচ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ৪৬৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় এক পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪৬৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮০১ কোটি ৩২ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ৯৮১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন কমেছে ১৮০ কোটি ২৮ লাখ টাকা।