শুক্রবার, জুন 2, 2023

এসএমইতে লাগবে না আলাদা নিবন্ধনঃ টাকা থাকলেই লেনদেন

পুঁজিবাজার রিপোর্টঃ শেয়ারবাজারে ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলেই যে কোনো বিনিয়োগকারীরা এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন করতে পারতেন। তবে এর জন্য তাকে কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর বা যোগ্য বিনিয়োগকারি হিসেবে আলাদাভাবে নিবন্ধিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল। এখন থেকে নিবন্ধনের এই আনুষ্ঠানিকতা বাদ হয়ে গেল।

এর আগে পুঁজিবাজারে এসএমই প্ল্যাটফর্মে লেনদেন করার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ডিএসইর ইএসএস ওয়েবসাইটে অনলাইন ফর্ম পূরণ করে তা মেইল করতে হতো। এরপরে ডিএসই তা যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিত।

তবে এখন থেকে স্মল ক্যাপ প্লাটফর্মে লেনদেনে যোগ্য বিনিয়োগকারির আলাদা করে নিবন্ধন করতে হবে না। সিডিবিএল ও ব্রোকারেজ হাউজগুলো থেকে তথ্য নিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে এ নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। কারও পোর্টফোলিওতে ২০ লাখ টাকার বিনিয়োগ (ক্রয় মূল্য বা বাজার দরের সর্বোচ্চটা বিবেচ্য) থাকলেই ডিএসই এ নিবন্ধন করে দেবে। নিবন্ধনের পর থেকে বিনিয়োগকারিরা এসএমই প্লাটফর্মে থাকা শেয়ার মূল মার্কেটের মতই কেনাবেচা করতে পারবেন। এর জন্য বিনিয়োগকারিদের কোন বাড়তি ফি দিতে হবে না। তবে লেনদেনের ক্ষেত্রে মূল মার্কেটের অন্য শেয়ারের মতো ব্রোকারেজ হাউজের নির্ধারিত কমিশন দিতে হবে।

স্বল্প মূলধনের কোম্পনির জন্য গঠিত স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্মের উন্নয়নের স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্রমতে, সিডিবিএল এবং ব্রোকারেজ হাউজের কাছেই বিনিয়োগকারিদের সব তথ্য থাকায় এখন থেকে প্রতি প্রান্তিকে যোগ্য বিনিয়োগকারিদের তালিকা স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে তারা সরবরাহ করবে। সেখান থেকে এক্সচেঞ্জ বিনিয়োগকারিদের শেয়ার কেনাবেচার সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করবে।

প্রতিবার শেয়ার কেনাবেচার সময় ব্রোকারেজ হাউজগুলো তাদের ব্যাক অফিস সফটওয়্যার বা অর্ডার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে পরীক্ষা করে দেখবে বিনিয়োগকারি এই লেনদেনের জন্য যোগ্য কি না। এরপরের ধাপে দিনশেষে স্টক এক্সচেঞ্জের ক্লিয়ারিং এন্ড সেটেলমেন্ট সফটওয়্যারে সারাদিনের তথ্য পরীক্ষা করে কমিশনে পাঠানো হবে। যদি কোন কারনে ব্রোকারেজ হাউজ এর ব্যত্যয় করে তবে তাকে সতর্ক করার ব্যবস্থাও নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, বিভিন্ন পক্ষের দাবির প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে চায় এমন স্বল্প মূলধনী কোম্পানির জন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জে ‘স্মল ক্যাপিটাল প্লাটফর্ম’ নামে আলাদা বাজার গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

এর প্রেক্ষিতে স্বল্প মূলধনের কোম্পনির জন্য বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর অফার বাই স্মল ক্যাপ কোম্পানিজ) রুলস-২০১৬ প্রনয়ন করে। তবে ২০১৮ সালে এর কিছু বিধির সংশোধন আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

এরপর ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) স্মল ক্যাপ মার্কেট (এসএমই) প্লাটফর্ম উদ্বোধন করে। ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এসএমই প্লাটফর্ম উদ্বোধনের আড়াই বছর পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেয়ারবাজারে এসএমই প্রতিষ্ঠানের লেনদেন শুরু হয়।

এর আগে শেয়ারবাজারে ৫০ লাখ টাকা বিনিয়োগ থাকলে এসএমই প্লাটফর্মে লেনদেন করার সুযোগ পেতন বিনিয়োগকারীরা। পরে সেটা কমিয়ে ২০ লাখ টাকা করা হয়েছে। ২০ লাখ টাকা বা তার বেশি বিনিয়োগ থাকা যে কোন বিনিয়োগকারী কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর হিসেবে নিবন্ধিত হবেন।

প্রথমিকভাবে ৬টি কোম্পানি নিয়ে শুরু হয় ডিএসইর এসএমই প্লাটফর্মের লেনদেন। এই ছয় কোম্পানি হল- বেঙ্গল বিস্কিুট, ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়, অ্যাপেক্স ওয়েভিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিং মিলস, মাস্টার ফিড এগ্রো, অরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এবং হিমাদ্রী লিমিটেড।

এই এসএমই প্লাটফর্মে শুধু কোয়ালিফাইড ইনভেস্টররা লেনদেন করতে পারেন। কোয়ালিফাইড ইনভেস্টর বলতে বিনিয়োগ-সংক্রান্ত সম্যক ধারণা রয়েছে এমন প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও উচ্চ নিট সম্পদধারী ব্যক্তিকে বোঝায়।

বর্তমানে ডিএসই’র এসএমই প্লাটফর্মে ১০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত। এর মধ্যে নিয়ালকো অ্যালয়স, কৃষিবিদ ফিড, মাস্টার ফিড এগ্রোটেক, মোস্তফা মেটাল, মামুন এগ্রো ও অরিজা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এই ছয় কোম্পানি ‘কিউআইও’ প্রক্রিয়ায় শেয়ার বিক্রি করে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বাকি চার কোম্পানি অ্যাপেক্স ওয়েভিং, বেঙ্গল বিস্কুট, হিমাদ্রি ও ওয়ান্ডারল্যান্ড টয়েজকে বিএসইসির নির্দেশে ওটিসি থেকে এসএমই প্লাটফর্মে নিয়ে আসা হয়েছে।

spot_img

অন্যান্য সংবাদ