পুঁজিবাজার রিপোর্টঃ পুঁজিবাজারে কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা অব্যাহত রাখার প্রস্তাব দিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সেচেঞ্জ (সিএসই)। অন্যদিকে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর্পোরেট কর কমানো ও লভ্যাংশের উপর দ্বৈত কর প্রত্যাহার সহ চার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।
আজ মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলন কক্ষে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় এ প্রস্তাব দেয়া হয়। প্রাক-বাজেট আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআরের কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক। এ সময় এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা ও সদস্য (আয়কর নীতি) সামস উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ
সিএসইর প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন এক্সচেঞ্জটির মহাব্যবস্থাপক মো. গোলাম ফারুক। তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবিত আয়কর আইন-২০২২ এ পুঁজিবাজারে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট হারে কর দিলে ওই অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তোলার বিধানটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু, আমরা মনে করি, বিধানটি বলবৎ রাখা যেতে পারে। কারণ, বিদ্যমান আইনের এ বিধান প্রস্তাবিত আয়কর আইনে অক্ষুণ্ন রাখা হলে বিভিন্ন শ্রেণির করদাতারা তাদের বৈধ উপায়ে উপার্জিত অপ্রদর্শিত অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এতে সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির সঙ্গে টাকা পাচারের ঝুঁকিও হ্রাস পাবে বলে মনে করি।’
এ প্রস্তাবের জবাবে এনবিআরের কাস্টমস সদস্য (শুল্ক নীতি) মাসুদ সাদিক বলেন, ‘অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে যখন নানা দিক থেকে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তখন আপনাদের পাশে পাওয়া যায় না। আপনাদের ফোরাম থেকেও তখন কিছু বলা হয় না।’
এছাড়া চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এর পক্ষ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত করপোরেট কর হার শূন্য শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাবও করেন তিনি। তিনি বলেছেন, ‘জনস্বার্থ রক্ষায় নিয়োজিত বিশেষায়িত জাতীয় প্রতিষ্ঠান ও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর কর হার শূন্য শতাংশ করা যেতে পারে।’
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন, ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের চলতি অর্থবছরে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের প্রতি বর্গমিটারের ওপর নির্দিষ্ট হারে এবং নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা যেকোনো সিকিউরিটিজের ওপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে কর্তৃপক্ষসহ কেউ প্রশ্ন করতে পারবে না। একই সময় ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে ওই বিনিয়োগের ওপর ১০ শতাংশ কর দিলে আয়করসহ কোনো কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন করবে না।
লভ্যাংশ থেকে উৎসে কর কর্তনের বিধান বাতিল চেয়ে গোলাম ফারুক আরও বলেছেন, ‘খসড়া আয়কর আইনের ১০৯ ধারায় উৎসে কর কর্তনের হার কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ ও নিবাসী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ১০-১৫ শতাংশের বিধান রাখা হয়েছে। আমরা মনে করি, লভ্যাংশ প্রদানকারী কোম্পানি তার মুনাফার ওপর কর দিয়ে পুনরায় লভ্যাংশ বিতরণের সময় কর কর্তন দ্বৈত করের সৃষ্টি করে। তাই, এরকম উৎসে কর পরিহার করা হলে অধিকতর লভ্যাংশ বণ্টনের সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং কর আদায় প্রক্রিয়া সহজতর হবে।’
বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)
অন্যদিকে বিএমবিএ’র প্রস্তাবে তালিকাভূক্ত কোম্পানীর কর হার কমিয়ে ১৫% এ করার জন্য বলা হয়েছে। তাদের মতে, তালিকাভুক্ত কোম্পানীর জন্য কর রেয়াত ৭.৫% যা উদ্যোক্তাদেরকে তালিকাভুক্তির জন্য উৎসাহিত করে না। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানীর কর হার ২২.৫% এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানীর কর হার ৩০% তবে ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, টেলিকম, ট্যোবাকো ইত্যাদি খাত ব্যতিত।
৭.৫% কর সুবিধা দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠিত শিল্প প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক কোম্পানী ইত্যাদিকে আকৃষ্ট করতে পারেনি বলে মনে করেন তারা। আরও বলা হয়, পুঁজিবাজার নিয়ে আলোচনা আসলে প্রথমেই আসে ভাল কোম্পানীর শেয়ারের অভাব। এ বিষয়টি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। কেননা দেশে রেজিস্ট্রার্ড লিমিটেড কোম্পানীর সংখ্যা ১,৫০,০০০ এর বেশী, কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানীর সংখ্যা মাত্র ৩৪৮টি যা অত্যন্ত নগণ্য।
এছাড়াও মার্চেন্ট ব্যাংক সমুহকে সার্বিক অবস্থা বিবেচনা পূর্বক কর হার ২৫% করা হোক এবং তা সাধারন সার্কেলে এসেসমেন্ট করার বিষয়ে বলা হয়েছে। এ সম্পর্কে বিএমবিএ বলে, বর্তমানে মার্চেন্ট ব্যাংক সমুহ বৃহৎ করের আওতাধীন রয়েছে এবং তার কর হার ৩৭.৫ %, যা হতাশাজনক। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংক কর্মরত আছে। পুঁজিবাজারের ধীর গতি, কোভিড-১৯ , ব্যবসার সীমাবদ্ধতা থাকায় বেশির ভাগ মার্চেন্ট ব্যাংক অপারেটিং খরচ চালানোই সম্ভব হচ্ছে না। এমতাবস্থায়, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের বৃহৎ করের আওতায় রাখা এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো কর হার নির্ধারন অযৌক্তিক এবং টিকে থাকা হুমকির সম্মুখীন। তাদের মতে, মার্চেন্ট ব্যাংক সমুহকে বৃহৎ করে যুক্ত করে ভূল ব্যবস্থাপনায় ফেলা হয়েছে।
দ্বৈত করের ব্যাপারেও সমাধান চায় বিএমবিএ। প্রস্তাবে অগ্রিম করটিকে চুড়ান্ত কর হিসাবে বিবেচনা করার বিষয়ে বলা হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জ লিমিটেডের চিফ অপারেটিং অফিসার এম সাইফুর রহমান মজুমদার তার প্রস্তাবনায় বন্ড মার্কেট সম্প্রসারণে সব ধরনের বন্ডে অর্জিত সুদের ওপর প্রযোজ্য কর প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদী অর্থায়নে ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে বন্ড মার্কেটের ওপর জোর দেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে আমাদের বন্ড মার্কেট খুবই ছোট পরিসরে রয়েছে। বর্তমানে জিরো কুপন বন্ডে অর্জিত সুদের ওপর কর সুবিধা রয়েছে। আমরা চাই, করপোরেট বন্ড মার্কেটসহ সব ধরনের তালিকাভুক্ত বন্ডে একই ধরনের সুবিধা দেওয়া হলে শক্তিশালী বন্ড মার্কেট প্রতিষ্ঠা হবে।’