ইমদাদ হোসাইন: ব্যাংক এশিয়ার মিডফোর্ট শাখায় সৈয়দ ইকরাম হোসাইন নামের এক ব্যক্তির সঞ্চয়ী হিসাবে পড়ে আছে ২৬ হাজার ৪৯৭ টাকা। সর্বশেষ তিনি সেই অ্যাকাউন্টে লেনদেন করেছিলেন ২০১০ সালে। এরপর এই অর্থের হিসেব নেয়ার জন্য তিনি বা তার পরিবারের কেউ এই অর্থের খোঁজ নিতে আসেননি। ব্যাংকও উল্লেখিত ঠিকানায় বারার নোটিশ পাঠিয়ে কোনো সাড়া পায়নি। ব্যাংকের আইন অনুযায়ী সেই অর্থ পাঠাতে হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে এরকম অদাবিকৃত অর্থ জমা হয়েছে ১০৮ কোটি টাকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে অদাবিকৃত ১০৮ কোটি ১৮ লাখ ২২ হাজার ৫০২ টাকা এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে।
‘ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ (২০১৮ পর্যন্ত সংশোধিত)’-এর ৩৫ ধারা অনুযায়ী ১০ বছর যাবৎ কোনো ব্যাংক হিসাবে লেনদেন না হলে এবং ওই আমানতের গ্রাহককে খুঁজে না পাওয়া গেলে, সে অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জমা করতে হয় ব্যাংকগুলোকে।
তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৭ সালে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিয়েছিলো ১৫ কোটি ২১ লাখ ৩০ হাজার টাকার অদাবিকৃত অর্থ। যথাক্রমে ২০১৮ সালে ১০ কোটি ৬৪ লাখ ৩৮ হাজার, ২০১৯ সালে ১০ কোটি ৪৮ লাখ ৭১ হাজার, ২০২০ সালে ৩৪ কোটি ৪৫ লাখ ৩৩ হাজার এবং ২০২১ সালে এসেছিলো ৩৭ কোটি ৩৮ লাখ ৫০ হাজার ২২৮ টাকার অদাবিকৃত অর্থ জমা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরো অর্থ সরকারি কোষাগাওে জমা দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তার মতে, সঞ্চয়ী হিসাবের মতো মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রেও ১০ বছর সময় দেয়া হয়। তবে এক্ষেত্রে মেয়াদি আমানতের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ১০ বছর পর গ্রাহককে খোঁজা হয়। খোঁজ পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় ওই টাকা জমা দেয়। এমনি করে ব্যাংকের লকারে থাকা মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রীও অদাবিকৃত হলে তা জমা নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ১০ বছরের বেশি সময় পড়ে থাকা আমানত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানোর নির্দেশনা রয়েছে। ব্যাংকগুলো সেটা পরিপালনও করছে। তবে যারা এখনও তথ্য দেয়নি, পরিদর্শনের মাধ্যমে তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা হবে। এসব অর্থ একটি নির্ধারিত সময় পর আমরা সরকারি কোষাগারে জমা দিই। এ প্রক্রিয়া এখনও চলমান বলেও জানান তিনি।
অদাবিকৃত সম্পত্তির বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, গ্রাহক ১০ বছর পর্যন্তে লেনদেন বা যোগাযোগ না করলে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৩৫(১) ধারা অনুযায়ী তাদের পরিশোধযোগ্য অর্থ, পরিশোধযোগ্য চেক, ড্রাফট বা বিনিময় দলিল এবং ব্যাংকের জিম্মায় রক্ষিত মূল্যবান সামগ্রী অদাবিকৃত অর্থ ও মূল্যবান সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে সরকার, নাবালক বা আদালতের অর্থ এ নিয়মের আওতায় পড়বে না।
গণনাকৃত অর্থ ওচেক, ড্রাফট বা বিনিময় দলিলের পাওনাদারদের পক্ষে কোনো ব্যক্তি এবং মূল্যবান সামগ্রীর আমানতকারীকে তার দেয়া ঠিকানায় রেজিস্ট্রিকৃত ডাকযোগে তিন মাসের লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে। ড্রাফট বা বিনিময় দলিলে পাওনাদারের ঠিকানা পাওয়া না গেলে আবেদনকারীর ঠিকানায় অনুরূপ নোটিশ পাঠাতে হবে। এক্ষেত্রে আইনের ৩৫(৩) ধারা অনুসরণ করতে হবে।
নোটিশ পাঠানোর তিন মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও যদি কোনো প্রাপ্তি স্বীকারপত্র বা উত্তর না আসে, তবে আইনের ৩৫(২) অনুযায়ী অদাবিকৃত আমানত ও মূল্যবান সামগ্রী প্রতি বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে অদাবিকৃত আমানতের অর্থ সুদসহ চেক/পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা দিতে হবে এবংদেশী ও বৈদেশিক মুদ্রার আমানতের অর্থ পৃথকভাবে হিসাবায়ন করতে হবে। দেশী মুদ্রার আমানতের ক্ষেত্রে টাকায় অংকিত চেক/পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিসে জমা দিতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার আমানতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অনুমোদিত ছয়টি বৈদেশিক মুদ্রা মার্কিন ডলার, পাউন্ড, ইউরো, কানাডীয় ডলার, জাপানি ইয়েন ও চীনা ইউয়ান রেনমিনবিতে অংকিতচেক/পে-অর্ডারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ফরেক্স অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টে জমা দিতে হবে। অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রারক্ষেত্রে সমমূল্যের মার্কিন ডলারে অংকিতচেক/পে-অর্ডার প্রদান করতে হবে।
অদাবিকৃত আমানতের অর্থ জমা দেয়ার ফরওয়ার্ডিং লেটারের সঙ্গে নির্ধারিত ছকে বিভিন্ন তথ্য ও দলিলাদি সংযুক্ত করতে হবে। ফরওয়ার্ডিং লেটারের একটি অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগে পাঠাতে হবে।