পুঁজিবাজার রিপোর্টঃ দরপতন থেমে সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ফিরেছে দেশের পুঁজিবাজার। চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিনে বেশ খানিকটা দর সংশোধনের কারনে টানা পতনের শংকায় ছিলেন বিনিয়োগকারিরা। সেখান থেকে তৃতীয় দিনে বেশ খানিকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে সূচক। আর সূচকের এই ঘুরে দাঁড়ানোতে সবচে বেশি অবদান রেখেছে বস্ত্র খাত। গতকালের চেয়ে যেখানে সব খাতের মূলধন কমেছে সেখানে উল্লফন দেখা গেছে এই খাতের লেনদেনে। লেনদেনের প্রায় ১৬ শতাংশ বা টাকার অংকে ১৭০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে এই খাতটিতে।
আনুপাতিক হারে আজ সবচে বেশি দরও বেড়েছে বস্ত্র খাতের কোম্পানিতে। আজ এ খাতের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। এই খাতের ৫৮টি কোম্পানির মধ্যে ৪২টিরই দর বেড়েছে, অপরিবর্তীত ছিল ৭টি কোম্পানির দাম।
এমনকি লেনদেন শেষ হওয়ার সময় আজ যতটুকু দর বাড়তে পারবে সেই দরে গিয়ে যে ৫টি কোম্পানি বিক্রেতা শুন্য হয়ে ছিল তার প্রতিটিই এই খাতের।
আজ বস্ত্রখাতে বিনিয়োগকারিদের যে প্রবল আগ্রহ ছিল তা মূলত প্রান্তিক শেষের হিসেব প্রকাশকে কেন্দ্র করেই। খুব শিগগিরই এই খাতের কোম্পানিগুলো তাদের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। সেখানে বেশ কয়েকটি কোম্পানি ভালো আয় দেখাবে বলে প্রত্যাশা বাজারসংশ্লিষ্টদের। এ প্রত্যাশার পারদে চড়েই বিনিয়োগকারিদের এই খাতের উপর বাড়তি আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারনা করছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা।
বস্ত্রখাতের এ উত্থান সকাল থেকেই লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। এর সাথে একই গতিতে উত্থান হয়েছিল সূচকের। তবে সেই উত্থান দিন শেষে খানিকটা স্তিমিত হয়ে আসে। দিনের প্রথম ভাগে যেভাবে শেয়ার কিনছিলেন বিনিয়োগকারিরা ঠিক সেভাবেই দিনের শেষের ভাগে শেয়ার বিক্রি করে বের হয়ে যান তারা। তার প্রমাণ পাওয়া যায় আজকের মোট লেনদেনে। আজ গতকালের চেয়ে প্রায় ১শ কোটি টাকা কম লেনদেন হয় বাজারে। ধারণা করা হচ্ছে লেনদেনে ভাটার ক্ষেত্রে গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ধাপে ধাপে লকডাউন বাড়ানোর ঘোষণা বেশ প্রভাব ফেলেছে। তবে ভয়ের এই বলয় থেকে বের করে নিয়ে আসতে হাত লাগায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারিরা। তাদের অংশগ্রহনেই মূলত আজ সূচক খানিকটা পজেটিভ থেকেই বাজার শেষ হয়।
আজ বাজারে ডিএসই ব্রড ইনডেক্সের সবচে বেশি পয়েন্ট যোগ করে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ। আইসিবি একাই সাড়ে ১০ পয়েন্ট যোগ করে। অন্যদিকে দুই মাল্টিন্যাশনাল ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো ও গ্রামীনফোন ইনডেক্সকে টেনে নামাতে ভূমিকা রাখে। তারা যথাক্রমে ১১ পয়েন্ট ও সাড়ে ৮ পয়েন্ট মাইনাস করে ইনডেক্সকে।
দিনের প্রথম ঘন্টার পর উত্থানের ধারা যে গতিতে কমতে শুরু করে, তা লেনদেনের শেষ সময় পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে অব্যাহত ছিল। ফলে দিনের প্রথমে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সাড়ে ৫৯ পয়েন্ট বাড়লেও দিন শেষে মাত্র ১৩ পয়েন্ট উত্থানে শেষ হয়েছে লেনদেন। টানা ৯ দিন ধরে ৭ হাজার পয়েন্টের কাছাকাছি থাকা সূচক আজ মঙ্গলবার দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৩২ পয়েন্টে।
এর ধারাবাহিকতা দেখা যায় কোম্পানির দাম কমা-বাড়ার সংখ্যাতেও। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৭৯ কোম্পানির মধ্যে শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৬৪টির, কমেছে ১৬২টির এবং অপরিবর্তিত থাকে ৫৩টির। ডিএসইতে এদিন ১ হাজার ১১৩ কোটি ৯১ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে, যা আগের কার্যদিবসের চেয়ে ১০১ কোটি টাকা কম।
সূচক বাড়িয়েছে যারা
মঙ্গলবার সূচক বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা ছিল আইসিবির ১১ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৫.৮৫ শতাংশ। এ ছাড়া, ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিসের শেয়ার দর দশমিক ৪৭ শতাংশ বাড়ায় সূচক বেড়েছে ৩.০২ পয়েন্ট।
হাইডেনবার্গ সিমেন্টের সূচক বৃদ্ধিতে অবদান ছিল ২.৯৫ পয়েন্ট। স্কয়ার টেক্সটাইলের ২.৪৮ পয়েন্ট। বেক্সিমকো লিমিটেডের ২.৪৫ পয়েন্ট।
এ ছাড়া, সূচক বৃদ্ধিতে ভূমিকা ছিল ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন, ইসলামী ব্যাংক, বসুন্ধরা পেপার মিলস, বিএসআরএম স্টিল ও বিএসআরএম লিমিটেড।
অপরদিকে শেয়ারের দর পতনে সূচক কমাতে সহায়ক ছিল বৃটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, গ্রামীনফোন, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল, ব্র্যাক ব্যাংক, লিন্ডে বিডি, সোনালী পেপার, বেক্সিমকো ফার্মা, বিকনফার্মা, রেনেটা ও ইউনিক হোটেল।
দর বাড়া ১০ কোম্পানি
মঙ্গলবার দিনের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে নতুন তালিকাভুক্ত বিডি থাই ফুডের। প্রথম দিনের লেনদেন কোম্পানির শেয়ারের কোনো বিক্রেতা ছিল না। শেয়ার কেনার জন্য আগ্রহী থাকলেও এদিন মাত্র ২৩৪টি শেয়ার হাতবতল হয়েছে।
এ ছাড়া, ১০ শতাংশ শেয়ার দর বেড়েছে আর ও একটি কোম্পানি স্কয়ার টেক্সটাইলের। দর বৃদ্ধিতে ৬৩ টাকার শেয়ার পৌঁছেছে ৬৯ টাকা ৯০ পয়সায়।
এদিন ৯ শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে চারটি কোম্পানির। এগুলো হচ্ছে মতিন স্পিনিং, ইউনিয়ন ইন্স্যুরেন্স, কুইন সাউথ টেক্সটাইল ও মালেক স্পিনিং।
হাইডেনবার্গ সিমেন্টের শেয়ার দর বেড়েছে ৮.৭১ শতাংশ।
সাত শতাংশের বেশি শেয়ার দর বেড়েছে তিনটি কোম্পানির। এর মধ্যে আছে ন্যাশনাল টি কোম্পানি, হামিদ ফেব্রিক্স ও বসুন্ধরা পেপার মিলস।
দর কমা ১০ কোম্পানি
দিনের সবচেয়ে বেশি দর হারিয়েছে পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৫.৪৭ শতাংশ। এতে ৮৪ টাকার শেয়ার পৌঁছেছে ৭৯ টাকা ৪০ পয়সায়।
দেশ গার্মেন্টসের শেয়ার দর কমেছে ৫.৩০ শতাংশ। ফার কেমিক্যালের শেয়ার দর কমেছে ৫ শতাংশ।
৪ শতাংশের বেশি শেয়ার দর কমেছে দুটি কোম্পানির। এপেক্সফুড ও বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির।
তিন শতাংশের বেশি শেয়ার দর কমেছে আটটি কোম্পানির। এর মধ্যে আছে ফারইস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স, জিল বাংলা সুগার, অলেম্পিক এক্সেসরিস, দুলামিয়া কটন, এএমসিএল (প্রাণ), শ্যামপুর সুগার, ফুওয়া সিরামিক, সোনালী পেপার ও অনালিমা ইয়ার্ড।
লেনদেন সেরা ১০
সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকো লিমিটেডের ৮৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এদিন কোম্পানিটির ৫৬ লাখ ৫৮ হাজার ২২০টি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানির ৪৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
এ ছাড়া ফরচুন সুজের ৩৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা শেয়ার লেনদেন হয়েছে। স্কয়ার টেক্সটাইলের ৩৪ কোটি ৩১ লাখ টাকার, বৃটিশ আমেরিকান ট্যোবাকোর ২৫ কোটি ১৩ লাখ টাকার, পাওয়ার গ্রিডের ২৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
ওরিয়ন ফার্মার ২২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার, এপেক্স ফুটওয়ারের ২১ কোটি ৮১ লাখ টাকার, এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ২০ কোটি ১৪ লাখ টাক ও এসিআই কোম্পানির ১৯ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে।