পুঁজিবাজার রিপোর্টঃ সুচকে বড় কোনো উত্থান না হলেও লেনদেনে অনেক দিন পর জোয়ার এসেছে পুজিবাজারে।আজ সোমবার ডিএসইর লেনদেন ছাড়িয়ে গেছে ১ হাজার ৩’শ কোটি টাকা। এদিন ডিএসইর বৃহৎ সূচকের ৬৯১৪ পয়েন্ট পর্যন্ত উত্থান হলেও লেনদেনের শেষে এসে তা ৬৮৮২ পয়েন্টে থামে। অনেক সাধারন বিনিয়োগকারি বাজার বাড়তে দেখলেই মনে করেন, এখন থেকে বাজার শুধু বাড়তেই থাকবে। কিন্তু শেয়ার বাজারের ধর্মই হল, এটি বাড়বে এবং কমবে। এর ভেতর থেকেই তাদের ব্যবসা বের করে নিতে হবে। কেউ তা করতে না পারলে একথা বলা যায় না যে বাজার খারাপ হয়ে গেছে। আবার বড় কোনো খবরের পরে এটাও ভাবা ঠিক নয় যে, এই খবরে বাজার এখন শুধুই বাড়বে ।জমা বাড়া নিয়েই হলো শেয়ার বাজার।
তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারন বিনিয়োগকারিদের জন্য এর নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি যেসব সুবিধাদি দিয়ে যাচ্ছে এবং গেম্বলারসহ দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে যেভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে তাতে এবারের বাজারের গন্তব্য বহুদূর বলে ধরেই নেয়া যায়।
বাজার বিশ্লেষকদের ধারনা, বর্তমান সরকারের আমলে এ যাবৎ যতগুলো কমিশন এসেছে তারমধ্যে শিবলি কমিশনই সরকারের সবচেয়ে কাছাকাছি পৌছতে সক্ষম হয়েছে। কাজেই তাদের ধারনা,এ দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যদি কিছু করা সম্ভব হয় সেটি এই কমিশনই পারবে।
বিশ্লেষকদের এই ধারনার সাথে একমত হয়ে ডিএসইর খাজা সিকিউরিটিজের একজন বিনিয়োগকারি পুঁজিবাজার ডটকমকে বলেন, আমরা যে খাদের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম সেখান থেকে এই কমিশন টেনে না তুললে কত বিনিয়োগকারির যে আত্নহত্যা করা লাগতো তার ইয়াত্তা ছিলনা। সেই কঠিন পরিস্থিতি আমরা মোকাবেলা করেছি, এখন আমাদের জন্য শুধুই সামনের দিকে পথচলা, এর বিকল্প কিছুই ভাবছেনা কেউ।
এদিকে আজকের বাজার বিশ্লেষনে দেখা যাচ্ছে, দিন শেষে ডিএসইতে বেড়েছে ২১৭টি কোম্পানির শেয়ারদর, কমেছে ১৩২টির। দর অপরিবর্তিত আছে ২৮টির আর লেনদেন হয়েছে ১৩’শ ১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
খাত হিসাব করলে সবচেয়ে বেশি কোম্পানির দর বেড়েছে মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে। দারুণ দিন গেছে বস্ত্র ও বিদ্যুৎ জ্বালানি খাতেও। ওষুধ ও রসায়ন এবং প্রকৌশল খাতেও গেছে ভালো দিন। সাধারণ বিমা খাতে খুব একটা ভারো সময় না গেলেও জীবন বিমা খাতের কোম্পানিগুলোর দর বেড়েছে প্রায় সবগুলোর।
অন্যদিকে ব্যাংক, আর্থিক, সাধারণ বিমা খাতে খুব একট ভালো দিন কাটেনি।
সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বিবিধ খাতে। বেশ কিছুদিন পর দুই শ কোটি টাকা ছাড়াল এই খাতটি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে বিমাতে। এর পরের অবস্থানগুলো হলো বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বস্ত্র, ব্যাংক, প্রকৌশল, চামড়া।
মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুত সেই বৈঠকের দিনক্ষণ নির্ধারণ হলে এবং সেখান থেকে ইতিবাচক কোনো ঘোষণা এলে এই সক্রিয়তা আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সূচক বাড়াল যেসব কোম্পানি
সূচক যে পরিমাণ বেড়েছে, তার চেয়ে কিছুটা বেশি বড়িয়েছে কেবল ১০টি কোম্পানি।
টানা দ্বিতীয় দিন সূচকে সবচেয়ে বেশি পয়েন্ট যোগ করেছে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানি। বেক্সিমকো লিমিটেডের অবদান দ্বিতীয়।
প্রথম কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ১.০৫ পয়েন্ট, দ্বিতীয়টির ১.৮২ পয়েন্ট।
এই দুটি কোম্পানি যথাক্রমে ৬.৬১ ও ৪.৪২ পয়েন্ট সূচক বাড়িয়েছে। সব মিলিয়ে ১০টি কোম্পানিই সূচক বাড়িয়েছে ২৯.৫৭ পয়েন্ট।
রবি, ইউনাইটেড পাওয়ার, পাওয়ারগ্রিড, ব্র্যাক ব্রাংক, বেক্সিমকো ফার্মা, ফরচুন সুজ, স্কয়ার ফার্মা, লাফার্জ হোলসিম সিমেন্ট বাকি আটটি কোম্পানি।
বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ৪.৩৮ পয়েন্ট সূচক হারিয়েছে গ্রামীণ ফোনের ০.৫১ শতাংশ দরপতনে। দুই মাস ধরে অবিশ্বাস্য উত্থান শেষে পরপর দ্বিতীয় দিন সর্বোচ্চ পরিমাণ দর হারানো সোনলী পেপারের কারণ সূচক কমেছে ২.৬৬ পয়েন্ট।
ডেল্টা লাইফ, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি, রেকিট বেনকিনজার, ইসলামী ব্যাংক, জেনেক্স ইনফোসিস, লিনডে বিডি, ইউনিলিভার ও বিএসআরএম লিমিটেডের দরপতনেও সূচক কমেছে সবচেয়ে বেশি।
এই ১০টি কোম্পানির কারণেই সূচক থেকে কমেছে ১৬.০৭ পয়েন্ট।