রাফিউন ইবনে আবু শাফিঃ বছরের প্রথম দিনই দারুন শুভ সূচনা হয়েছে পুঁজিবাজারে। ডিএসইর বৃহৎ ইন্ডেক্স সেঞ্চুরির কাছাকাছি গিয়ে শেষ হয়েছে। বাজার সম্পর্কে বিনিয়োগকারিদের মধ্যে একটি ইতিবাচক ধারনার সৃষ্টি হওয়ায় কেউই হাতের শেয়ার ছাড়তে চাননি আজ। ফলে লে্নদেন তেমন না আগালেও বেশ উৎফুল্ল ভাব লক্ষ্য করা গেছে ডিএসইর বিভিন্ন হাউজে উপস্থিত বিনিয়োগকারিদের মধ্যে। টানা দুই মাসের অধোপতিত বাজার মাঝে মাঝে এ ধরনের উত্থানের ইঙ্গিত দিলেও তা কখনই স্থায়ী হয়নি। কিন্তু আজকের উত্থানকে বাজার বিশ্লেষক এবং বিনিয়োগকারিদের প্রায় সকলেই ২০২২ সালের জন্য বড় ধরনের শুভসুচনার ইঙ্গিতবাহী বলে মনে করছেন। তারা বলেছেন,নতুন কমিশনের যাবতিয় পদক্ষেপগুলোর প্রতিফলন ২০২২ সালেই দৃশ্যমান হবে।আর এ জন্যই তারা এতোদিন ধরে অপেক্ষা করছেন।
বিষয়টি নিয়ে ঢাকার বাহিরের একজন অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারি এবং পেশায় কলেজ শিক্ষক তার মতামত জানতে চাইলে তিনি পুজিবাজার ডটকমকে বলেন, ২০২২ সালে পুজিবাজারকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হবেনা। সব স্টেকহোল্ডারদের যাবতীয় দাবি পুরন করে বর্তমান কমিশন গুছিয়ে এনেছেন। এখন শুধু ফল ভোগ করার সময়।
এদিকে আজ ২ জানুয়ারি রোববারের বাজার হিশ্লেষনে দেখা গেছে এদিন, এদিকে আজ ডিএসই’র প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ৯৬ দশমিক ৪৮২২৮ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৬ হাজার ৮৫৩ দশমিক ১৩৯০৮ পয়েন্টে। ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১৪ দশমিক ২৫১৭১ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৪৫ দশমিক ৩৭৫১৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ২৮ দশমিক ০৫৫৯৭ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৫৬০ দশমিক ৬৪০০০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, আজ ডিএসইতে মোট ৩৭৮টি কোম্পানি, ফান্ড ও বন্ডের লেনদেন হয়েছে। এদের মধ্যে দিন শেষে দর বেড়েছে ২৯৪টির, কমেছে ৬৪টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২০টি শেয়ারের বাজারদর।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৮৯৪ কোটি ১৭ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা, যা আগের দিনের চাইতে ২৭ কোটি ৬৩ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা কম। আজকের লেনদেনে মোট ১৯ কোটি ৪৩ লক্ষ ৬২ হাজার ৫৪২টি শেয়ার ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৩৬৮বার হাতবদল হয়েছে।
এদিকে খাতভিত্তিক লেনদেনচিত্রে দেখা যায়, আজ ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে বিবিধ খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ দখলে নিয়েছে ব্যাংক খাত। ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সাধারণ বীমা খাত। ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল ঔষধ ও রসায়ন খাত। আর জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের দখলে ছিল মোট লেনদেনের ৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ।
আজ সূচকের উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড। মোট সূচকের মধ্যে ১১ দশমিক ০৪ পয়েন্ট বাড়িয়ে দেয় ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড একাই। সাথে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট কোম্পানি লিমিটেড ৯ দশমিক ৭৩, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ লিমিটেড ৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বাড়িয়ে সূচকের উত্থানে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি), বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ফরচুন সুজ লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশ লিমিটেড, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন এন্ড ডিসটিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড সূচকের উত্থাণে অগ্রণী ভুমিকা রাখে।
অন্য দিকে সূচক কমানোর চেষ্টায় সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড সবচে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। এদিন ২ দশমিক ৫৬ পয়েন্ট কমে সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড’র শেয়ারের কারনে। এছাড়াও ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২ দশমিক ৪৮, রেনেটা লিমিটেড ১ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট কমিয়ে দিয়েছে সুচক। এর সাথে সূচক কমাতে আরো ভূমিকা রাখে , ব্যাংক এশিয়া লিমিটেড, বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড
আবার ডিএসইতে লেনদেনের ভিত্তিতে করা তালিকার শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট কোম্পানি লিমিটেড। এদিন কোম্পানিটির প্রায় ৯৯ কোটি ৩৮ লক্ষ ২০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। এছাড়াও , বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি), ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, ফরচুন সুজ লিমিটেড, জেনেক্স ইনফোসিস লিমিটেড, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড, ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড, পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অফ বাংলাদেশ লিমিটেড, সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড লিমিটেড লেনদেনের ভিত্তিতে তালিকার শীর্ষ দশে ছিল।
আজ এক্সচেঞ্জটিতে দরবৃদ্ধির শীর্ষে থাকা কোম্পানিগুলো হচ্ছে যথাক্রমে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি), সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি লিমিটেড, দা ঢাকা ডাইং এন্ড ম্যা্নুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড, ফরচুন সুজ লিমিটেড, গোল্ডেন সন লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেড, দি পেনিনসুলা চিটাগং লিমিটেড, আর. এন. স্পিনিং মিলস্ লিমিটেড লিমিটেড।
অন্যদিকে ডিএসইতে আজ সবচেয়ে বেশি দর কমেছে যথাক্রমে এশিয়া ইন্সুরেন্স লিমিটেড, এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড, বাটা সু কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড, আইবিবিএল মুদারাবা পার্পিচ্যুয়াল বন্ড, কে এন্ড কিউ (বাংলাদেশ) লিমিটেড, রিলায়েন্স ওয়ান দা ফার্স্ট স্কিম অব রিলায়েন্স ইন্সুরেন্স মিউচুয়াল ফান্ড, রেনউইক যঞ্জেশ্বর এন্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ) লিমিটেড, সোনালী পেপার এন্ড বোর্ড মিলস লিমিটেড লিমিটেডের।
এদিকে ব্লক মার্কেটে মোট ১৯টি কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মোট ৫৭টি শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যার আর্থিক মূল্য ৬০ কোটি ৯৫ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা।