পুঁজিবাজার রিপোর্টঃ স্বল্প মূলধনের কোম্পানির বিরুদ্ধে এবার শক্ত অবস্থান নিতে যাচ্ছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। চলতি মাসের মধ্যেই একটা বিহিত করতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। আর এ লক্ষ্যে স্বল্প মূলধনের ৬৪ কোম্পানিকে চিঠি ইস্যু করেছে কমিশন।
দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি বিধান অনুযায়ী কোম্পানিগুলোকে মূলধন বাড়ানোর এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্তি বিধানের ৯(১)-এ বলা হয়েছে, তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিশোধিত মূলধন হতে হবে সর্বনিম্ন ৩০ কোটি টাকা। দীর্ঘদিন ধরে এ বিধান থাকলেও তালিকাভুক্ত অনেক কোম্পানি সেটি পরিপালন করেনি। এবার বিএসইসি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে এ বিধান পরিপালনে সময় বেঁধে দিয়েছে।
চিঠিতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, পুঁজিবাজারের মূল বোর্ডে ৩০ কোটি টাকার কম মূলধনের কোনো কোম্পানি আর থাকতে পারবে না। আর এ জন্য ৩০ কোটি টাকার নিচের ৬৪ স্বল্প মূলধনী কোম্পানিকে পরিশোধিত মূলধন বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে বিএসইসি।
বিএসইসির সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ মিনহাজ বিন সেলিমের সই করা চিঠিটি সকল কোম্পানিতে পাঠানো হয়েছে। একই সাথে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পারিচালক, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পারিচালক এবং সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অফ বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পারিচালকে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে।
এই চিঠি পাওয়ার পর কোম্পানিগুলোকে ৩০ দিনের মধ্যে তাদের পরিকল্পনা প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। মূলধন বাড়াতে কোম্পানিগুলো কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, তা এক মাসের মধ্যে কমিশনকে লিখিতভাবে জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোকে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহায়তা কমিশনের পক্ষ থেকে করা হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
বিএসইসির নির্দেশনা অনুযায়ী, কোম্পানিগুলোর মধ্যে যাদের পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি টাকার উপরে রয়েছে, সেগুলোকে ৩০ জুন ২০২২ এর মধ্যে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হবে। অন্যদিকে, যেসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ২০ কোটি টাকার নিচে রয়েছে, সেগুলোকে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ এর মধ্যে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হবে।
ডিএসই’র ওয়েবসাইট ঘেটে দেখা যায়, স্বল্প মূলধনী এই ৬৪টি কোম্পানির মধ্যে ১৩টি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকার নিচে, ১৭টি কোম্পানির ১০ কোটি টাকার নিচে, ২০টি কোম্পানির ২০ কোটি টাকার নিচে এবং বাকি কোম্পানিগুলোর ৩০ কোটি টাকার নিচে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ২০টি কোম্পানি লোকসান করেছে। বাকিদের মধ্যে সিংহভাগ কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খুব বেশি ভালো নয়।
উল্লেখ, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বিএসইসি স্বল্প মূলধনীর সামগ্রিক অবস্থা যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। স্বল্প মূলধনী কোম্পানিগুলোর আর্থিক পারফরম্যান্সের উন্নতিতে কি করা যায় সম্পর্কে জানাতে বলা হয় কমিটিকে। সেই প্রেক্ষিতেই এই চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে জানা যায়।
জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এ চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ার নিয়ে প্রায়ই নানা ধরনের কারসাজির অভিযোগ পাওয়া যায়। এ কারণে স্বল্প মূলধনি কোম্পানিগুলোকে মূল বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন,যারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে পারবে, তারা মূল বাজারে থাকবে। আর যেসব কোম্পানি ব্যর্থ হবে, সেগুলোকে এসএমই প্ল্যাটফর্মে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। যদি এসএমই প্ল্যাটফর্মে প্রেরণ করার মতো অবস্থা না থাকে, তাহলে অন্য বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২০ কোটি টাকর উপরের মূলধনী কোম্পানি
কোম্পানির নাম | পরিশোধিত মূলধন |
---|---|
মেঘনা সিমেন্ট মিলস | ২৭.৩ কোটি টাকা |
সোনার গাঁও টেক্সটাইল | ২৬.৫ কোটি টাকা |
এইচআর টেক্সটাইল | ২৫.৩ কোটি টাকা |
সিভিও পেট্টোক্যামিকেল রিফাইনারি | ২৫.২ কোটি টাকা |
আলহাজ্ব টেক্সটাইল মিলস | ২২.৩ কোটি টাকা |
কহিনুর ক্যামিকেলস | ২২.২ কোটি টাকা |
জিএমআই সিরিঞ্জ অ্যান্ড মেডিক্যালস ডিভাইস | ২২.১ কোটি টাকা |
অরিয়ন ইন্ডাস্ট্রিজ | ২০.৪ কোটি টাকা |
সিনো বাংলা ইন্ডাস্ট্রিজ | ২০ কোটি টাকা |
রহিমা ফুডস কর্পোরেশন | ২০ কোটি টাকা |
২০ কোটি টাকা নিচের মূলধনী কোম্পানি
কোম্পানির নাম | পরিশোধিত মূলধন |
---|---|
ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস | ১ কোটি টাকা |
সাভার রিফেক্টরিজ | ১.৪ কোটি টাকা |
লিব্রা ইনফিউশন | ১.৫ কোটি টাকা |
জুট স্পিনার্স | ১.৭ কোটি টাকা |
রেনউইক যগেশ্বর | ২ কোটি টাকা |
নর্দান জুট ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি | ২.১ কোটি টাকা |
এম্বি ফার্মাসিটিউক্যালস | ২.৪ কোটি টাকা |
সোনালী আঁশ ইন্ডাস্ট্রিজ | ২.৭১ কোটি টাকা |
মুন্নু এগ্রো অ্যান্ড জেনারেল মেশিনারিজ | ২.৭ কোটি টাকা |
ফার্মা এইডস | ৩.১ কোটি টাকা |
বাংলাদেশ অটোকার্স | ৪.৩ কোটি টাকা |
জেমেনি সি ফুডস | ৪.৭ কোটি টাকা |
রেকিট বেনকিজার | ৪.৭ কোটি টাকা |
কে অ্যান্ড কিউ | ৪.৯ কোটি টাকা |
শ্যামপুর সুগার মিলস | ৫ কোটি টাকা |
আজিজ পাইপ | ৫.৩ কোটি টাকা |
অ্যাপেক্স ফুডস | ৫.৭ কোটি টাকা |
জিলবাংলা সুগার মিলস | ৬ কোটি টাকা |
অ্যারামিট | ৬ কোটি টাকা |
স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ | ৬.৫ কোটি টাকা |
ন্যাশনাল টি কোম্পানি | ৬.৬ কোটি টাকা |
বঙ্গজ | ৭.৬ কোটি টাকা |
দেশ গার্মেন্টস | ৭.৫৩ কোটি টাকা |
দুলামিয়া কটন স্পিনিং মিলস | ৭.৬ কোটি টাকা |
ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রিজ | ৭.৭ কোটি টাকা |
এগ্রিকালচার মার্কেটিং (প্রাণ) | ৮ কোটি টাকা টাকা |
অ্যাপেক্স স্পিনিং অ্যান্ড নিটিং মিলস | ৮.৪ কোটি টাকা |
জিকিউ বল পেন ইন্ডাস্ট্রিজ | ৮.৯ কোটি টাকা |
বাংলাদেশ ল্যাম্প | ৯.৪ কোটি টাকা |
বাংলাদেশ মনুসপুল পেপার | ৯.৪ কোটি টাকা |
রহিম টেক্সটাইল মিলস | ৯.৫ কোটি টাকা |
রংপুর ফাউন্ডেরি | ১০ কোটি টাকা |
শমতা লেদার কমপ্লেক্স | ১০.৩ কোটি টাকা |
পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং | ১০.৫ কোটি টাকা |
ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক | ১০.৯ কোটি টাকা |
অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার | ১১.৩ কোটি টাকা |
ইউনিলিভার কনজ্যুমার | ১২ কোটি টাকা |
মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ | ১২ কোটি টাকা |
লিগেসি ফুটওয়্যার | ১৩.১ কোটি টাকা |
বাটা সু | ১৩.৭ কোটি টাকা |
স্ট্যাইল ক্রাফ্ট | ১৩.৯ কোটি টাকা |
ফাইন ফুডস | ১৪ কোটি টাকা |
ওয়াটা ক্যামিকেলস | ১৪.৮ কোটি টাকা |
আনোয়ার গ্যালভানাইজিং | ১৫.২ কোটি টাকা |
লিন্ডে বাংলাদেশ | ১৫.২ কোটি টাকা |
অ্যাপেক্স ট্যানারি | ১৫.২ কোটি টাকা |
মেঘনা কনডেস্ক মিল্ক | ১৬ কোটি টাকা |
প্রগ্রেসিভ লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি | ১৬.৬ কোটি টাকা। |
উসমানিয়া গ্লাস সিট ফ্যাক্টরি | ১৭.৪ কোটি টাকা |
আনলিমা ইয়ার্ন ডায়িং | ১৭.৯ কোটি টাকা। |
সোনালী পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিলস | ১৮.৩ কোটি টাকা |
শমরিতা হাসপাতাল | ১৮.৯ কোটি টাকা। |
হাক্কানি পাল্প অ্যান্ড পেপারস মিলস | ১৯ কোটি টাকা |