পুঁজিবাজার রিপোর্ট: এই উত্থান, এই পতন। এমন অবস্থার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে দেশের পুঁজিবাজার। এরই অংশ হিসেবে আজ নাম মাত্র উত্থান হয়েছে সূচকে। লেনদেনের গতি বৃদ্ধি আর সূচকের উত্থানে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদি হওয়ার আগেই তা ভেঙে যাচ্ছে। দুর্দিন কাটিয়ে পুঁজিবাজারে সুদিন ফেরার আভাস দিলেও খুব একটা তা স্থায়ী হচ্ছে না। ফলে বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা বাড়ছে। যদিও বাজার ধরে রাখতে নানামুখী প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। তবে কিছুতেই টানা যাচ্ছে না বিনিয়োগকারীদের। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের শুরুতে পুঁজিবাজারের সূচক ছিল ছয় হাজারের ওপরে। এখন সূচক ছয় হাজার থেকে সাড়ে চার হাজার পয়েন্টে নেমে এসেছে। এটি আসলে পুঁজিবাজারের জন্য ভালো খবর নয়। দেশের অর্থনীতি অনেক প্রসারিত হয়েছে। সে বিবেচনায় কিন্তু পুঁজিবাজার সবচেয়ে নাজুক অবস্থানে রয়েছে। কোনোভাবেই এ বাজারকে ভালো করা যাচ্ছে না। এবারের বাজেটের পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়েও পুঁজিবাজারের জন্য অনেক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ৯ বছরের মধ্যে এবারের মতো প্রণোদনা আগে দেওয়া হয়নি। আরও প্রণোদনার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে বিডিবিএলকে একটি বিনিয়োগ ব্যাংক হিসেবে দাঁড় করানো, অর্থাৎ আইসিবি যদি কোনো কারণে বাজারকে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বিডিবিএল বিনিয়োগ ব্যাংক বাজার স্থিতিশীলতায় কাজ করবে। এরকম একটি পরিকল্পনা হচ্ছে। যা ইতিবাচক। তবে শুধু সহযোগিতা করলেই বাজার ভালো হবে বিষয়টি এমন নয়। বাজারের মূল সমস্যা হচ্ছে বিনিয়োগকারীর আস্থা। কারণ, এ বাজারে বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যদি তারা মুনাফা করতে না পারেন, তাহলে কেন আসবেন? তাই সবার আগে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে হবে বলেও মনে করছেন তারা।
কেউ কেউ বলছেন, পুঁজিবাজারে হাজারো মানুষের বিনিয়োগ রয়েছে এবং অর্থনীতির অনেক খাত এর সঙ্গে জড়িত। বাজার ভালো হলে একদিকে অর্থনীতি ভালো হবে, অন্যদিকে বিনিয়োগকারীরাও লাভবান হবেন। কিন্তু পুঁজিবাজারে সেভাবে উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে না। বাজার নিয়ে যারা কারসাজি করে, তাদের শাস্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে, তাদের ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে এবং সচেতন হতে হবে।
এদিকে, আজকের বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক সূচক ডিএসইএক্স ২ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৫১৪ পয়েন্টে। প্রধান সূচক বাড়লেও ডিএসইর অপর দুই সূচক কমেছে। এর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ০.৮৭ পয়েন্ট ও ডিএসই-৩০ সূচক ৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১০১৬ ও ১৫৪৮ পয়েন্টে। দিনভর ডিএসইতে মোট ৩৫৩টি প্রতিষ্ঠান শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৬৯টির বা ৪৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ১২৬টির বা ৩৬ শতাংশের এবং ৫৮টি বা ১৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। এগুলোর ওপর ভর করে দিনশেষে ডিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৩৪৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। যা আগের দিন থেকে ৫৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বেশি। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ২৯৪ কোটি ২১ লাখ টাকার।
অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৭৩৩ পয়েন্টে। এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৩৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১০৯টির, কমেছে ৯০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭টির দর। দিনশেষে সিএসইতে ২৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্ট-ব্যক্তিরা বলছেন, দিন দিন পুঁজিবাজারের সূচক ও ট্রেড ভলিউম কমে যাচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বাজারে বিনিয়োগকারীর আস্থা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিনিয়োগকারীর আস্থা কোনো মতেই ফেরানো যাচ্ছে না। আসলে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিএসইসি, ডিএসইসহ আরও যেসব নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছে, এদের মধ্যে সমন্বিত কোনো প্রচেষ্টা দরকার। আর বাজার কমা মানেই কারসাজি হচ্ছে এটা বলা যাবে না। কারণ বাজারে ওঠা-নামা থাকবেই। যদি বাজারে শেয়ারদর ওঠা-নামা না থাকে সেটাকে বাজার বলা যায় না। গত দুবছর ধরে বাজার নিম্নগতির দিকে রয়েছে, এটা অস্বাকীর করার কোনো কারণ নেই। তবে এর মধ্যে সূচক পাঁচ হাজারের ওপরে ছিল। এখন সেখান থেকে অনেকটা নিচে রয়েছে। তবে আশা করা যাচ্ছে নতুন বছরে বাজার পুরোদমে ভালোর দিকে যাবে বলেও মনে করছেন তারা।